Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

এক নজরে উপজেলা পরিষদ

স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার ঐতিহাসিক বিবর্তণ :

 

** চিরস্থায়ী বন্দোবস্তআইন ১৭৯৩:

(১) শহর এলাকায় মিউনিসিপ্যালিটি এবং গ্রাম এলাকায় জমিদারী প্রথার সৃষ্টি।

(২) জমিদার শ্রেণী সৃষ্টি করা এবং রাজস্ব আদায় ও স্থানীয় শান্তিশৃংখলারদায়িত্ব জমিদারদের উপর অর্পণ।

(৩) জমিদাররা বিলাসবহুল জীবনযাপন এবং জনহিতকর কাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে ১৮৭০ সালে (৮০ বছর পর) ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি শৃংখলারক্ষার্থে চৌকিদারী পঞ্চায়েত আইন, ১৮৭০প্রবর্তিত হয়।

(ক) একটি পঞ্চায়েতের অধীনে কয়েকটি গ্রাম অন্তর্ভুক্তকরা হয়।

(খ)জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক মনোনীত ০৫ জন সদস্য থাকতো যারা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের এজেন্ট হিসেবে কাজ করত।

(গ)শান্তিশৃঙ্খলার সাথে কর আদায় করা ছিল এই পঞ্চায়েতের দায়িত্ব। তবে তারা কোন উন্নয়নমূলক কাজ করতো না।

 

** বঙ্গীয় স্থানীয় শাসন আইন ১৮৮৫:

বৃটিশ সরকার এই আইন প্রবর্তন করেন। এই আইনে তিন স্তরবিশিষ্টস্থানীয় সরকার পদ্ধতি চালু করা হয়।

 

(১) ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন কমিটি(পাশাপাশি চৌকিদারী পঞ্চায়েত ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল)।

(ক) ২৫.৯০ বর্গ কিঃ মিঃ হতে ৩৮.৮৫ বর্গ কিঃ মিঃ এলাকা নিয়ে ইউনিয়ন কমিটি গঠিত হতো।

(খ) উক্ত কমিটিতে ইউনিয়নের অধিবাসীদের মধ্য থেকে ০৫ থেকে ০৯ জন সদস্য নির্বাচিত হতেন।

(গ) কমিটির আওতায় এক বা একাধিক গ্রাম থাকতো।

(ঘ) ইউনিয়ন কমিটির কর ধার্য করার কোন ক্ষমতা ছিল না। তবে উন্নয়ন কার্যক্রমের সাথে কিছুটা সংশ্লিষ্টকরা হয়।

(ঙ) কমিটির সদস্যরা শান্তি শৃংখলারক্ষা ও কর আদায় ছাড়াও গ্রামের সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ, প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা, জন্ম-মৃত্যুর হিসাব রাখা এবং স্থানীয় বোর্ডের প্রত্যর্পিত কিছু বিষয়াদিদেখাশুনার দায়িত্ব দেয়া হয়।

 

(২) মহকুমা পর্যায়ে লোকাল বোর্ড

(ক) কমপক্ষে০৬ জন সদস্য নিয়ে লোকাল বোর্ড গঠন করা হতো। লোকাল বোর্ডের নিয়ন্ত্রণে

/ অংশ সদস্য ইউনিয়ন কমিটির সদস্যদের মধ্য থেকেই নির্বাচিত হতেন এবং সদস্যদের মধ্য থেকে একজনচেয়ারম্যান নিযুক্ত হতেন।

(খ) এ বোর্ডের ধরাবাঁধা কোন কাজ ছিল না। তবে বোর্ডের অধীন ইউনিয়ন কমিটিগুলোর নিয়ন্ত্রণ ওতাদের রিপোর্ট গ্রহণ ছিল এর অন্যতম কাজ।

(৩) জেলা পর্যায়ে জেলা বোর্ড

(ক) কমপক্ষে ০৯ জন সদস্য নিয়ে জেলা বোর্ড গঠন করা হয়।

(খ) লোকাল বোর্ড যদি সমগ্র জেলার প্রতিনিধিত্ব করতো তবে তাদের মধ্য থেকে অর্ধেক সদস্য নির্বাচিতকরা হতো এবং লোকাল বোর্ড যদি জেলার বিশেষ অংশের প্রতিনিধিত্ব করতো তাহলে সদস্যদের আনুপাতিক সংখ্যা প্রাদেশিক সরকার নির্ধারণ করে দিতেন।

(গ) প্রাদেশিক সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে জেলা বোর্ডের সদস্যদের মধ্য থেকে একজন চেয়ারম্যান

নির্বাচিত হতেন।

 

** ১৯১৯ সালের বঙ্গীয় পল্লীস্বায়ত্বশাসন আইনঃ

(১) এই আইনে ইউনিয়নকে কার্যকরী অর্থ সংগ্রহ ক্ষমতা এবং অধিকতর স্বাধীনভাবে দৈনন্দিন কার্য পরিচালনা করার ক্ষমতা দেয়া হয়।

(২) পঞ্চায়েত ও ইউনিয়ন কমিটির কার্য একত্রীভূত করে ইউনিয়ন বোর্ড গঠন করা হয়। মহকুমা পর্যায়ে লোকালবোর্ড এবং জেলা পর্যায়ে জেলা বোর্ড পূর্বের ন্যায় বলবৎথাকে।

(৩) ০৬ হতে ০৯ জন সদস্য নিয়ে ইউনিয়ন বোর্ড গঠন করা হয়। ০৯ জনের মধ্যে ০৩ জন সরকার কর্তৃকমনোনীত হতেন এবং বাকী সদস্যগণ জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতেন। মহিলাদের জন্য কোন ভোটাধিকারছিল না। যে সকল পুরম্নষ ২১ বছরের বেশি বয়স এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পত্তি ও শিক্ষা রয়েছে তাদেরই কেবল ভোটাধিকার ছিল।

(৪) সদস্যদের ভিতর থেকেই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতেন।

 

** মৌলিক গণতন্ত্র আদেশ, ১৯৫৯:

মৌলিক গণতন্ত্র আদেশে প্রধানত চার স্তরবিশিষ্ট স্থানীয় সরকারপ্রবর্তন করা হয়।

(১) ইউনিয়ন কাউন্সিলঃ

(ক) এটি স্থানীয় সরকারের সর্বনিম্ন স্তর।

(খ) গড়ে ১০ হাজার লোক বসবাসকারী এলাকা নিয়ে ১০ থেকে ১৫ জন সদস্য (/ নির্বাচিত, / মনোনীত) সমন্বয়ে ইউনিয়ন কাউন্সিল গঠিত।

(গ) সদস্যদের ভোটে তাদের মধ্য থেকে ০১ জন চেয়ারম্যান ও ০১ জন ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতেন।

(ঘ) এর কার্যকাল ছিল ০৫ বছর।

(ঙ) ১৯৬৩ সাল পর্যন্তভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতেন। পরে পদটি বাতিল করে দেয়া হয়।

(চ) এলাকার শান্তিশৃংখলা রক্ষা ছাড়াও এই কাউন্সিলকে ৩৭টি কার্যাবলী পালনের দায়িত্ব দেয়া হয়।তন্মধ্যে পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য, পানি সরবরাহ, শিক্ষা, যোগাযোগ, সমাজ কল্যাণ প্রভৃতি উলেস্নখযোগ্য।

(ছ) মৌলিক গণতন্ত্র আদেশে ইউনিয়ন কাউন্সিলকে তহবিল গঠন করার জন্য সম্পত্তির উপর কর এবং করারোপের ক্ষমতা প্রদান করা হয়।

(জ) সালিশী আদালত গঠন করার মাধ্যমে বিচার বিভাগীয় ক্ষমতা দেয়া হয়।

 

(২) থানা কাউন্সিলঃ

(ক) ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যানগণ পদাধিকারবলে থানা কাউন্সিলের সদস্য।

(খ) থানা পর্যায়ে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মৎস্য ও কো-অপারেটিভ বিভাগের অফিসারগণ থানা কাউন্সিলেরসদস্য হতেন।

(গ) মহকুমা প্রশাসক পদাধিকারবলে থানা কাউন্সিলের সভাপতি এবং সার্কেল অফিসার (উন্নয়ন) সহ-সভাপতি ছিলেন।

(ঘ) এ কাউন্সিলের কর ধার্য করার ক্ষমতা ছিল না। ইহা সমন্বয়কারীর ভূমিকা পালন করতো।

 

 

 

 

(৩) জেলা কাউন্সিলঃ

(ক) ১৯৬২ সালের পূর্ব পর্যন্তজেলা কাউন্সিল সরকারী ও মনোনীত সদস্যদের নিয়ে গঠিত হত।

(খ) জেলা কাউন্সিল এর মোট সদস্যের অর্ধেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কর্তৃক নির্বাচিত।

(গ) জেলা পর্যায়ের সরকারী কর্মকর্তাগণ সরকারী সদস্য হতেন।

(ঘ) জেলা প্রশাসক পদাধিকারবলে জেলা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ছিলেন।

(ঙ) সড়ক, ভবন, হাসপাতাল, ডিসপেনসারী, স্কুল ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য, ডাকবাংলো সংরক্ষণএবং জেলার অন্তর্গতস্থানীয় পরিষদসমূহের কর্মতৎপরতা সমন্বয় সাধন করা ছিল এটির প্রধান কাজ।

(৪) বিভাগীয় কাউন্সিলঃ

(ক) প্রশাসনিক বিভাগের এলাকা নিয়ে বিভাগীয় কাউন্সিল এলাকা গঠিত হত।

(খ) বিভাগীয় কাউন্সিলের অর্ধেক সদস্য ছিল সরকারী এবং বাকী অর্ধেক বেসরকারী।

(গ) বিভাগের বিভিন্ন সরকারী বিভাগ, স্থানীয় পরিষদ, মিউনিসিপ্যাল সংস্থার বিভিন্ন কার্যক্রমের সমন্বয়সাধন ছিল এর প্রধান কাজ।

* বিঃ দ্রঃ -১৯৬২ সালে প্রাদেশিক আইন পরিষদ গঠিত হওয়ার পর প্রাদেশিক উন্নয়ন উপদেষ্টাবোর্ড এবং বিভাগীয় কাউন্সিল বাতিল করা হয়।

** রাষ্ট্রপতির আদেশ নং ৭, ১৯৭২:

(১) মৌলিক গণতন্ত্র আদেশ বলে গঠিত সব ক’টি প্রতিষ্ঠান ভেঁঙ্গে দেয়া হয়।

(২) ইউনিয়ন কাউন্সিল, থানা কাউন্সিল এবং জেলা কাউন্সিলের নাম পরিবর্তন করে যথাক্রমে ইউনিয়ন পঞ্চায়েত,থানা উন্নয়ন কমিটি এবং জেলা বোর্ড রাখা হয়।

 

 ** স্থানীয় সরকার অধ্যাদেশ, ১৯৭৬: 

এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে তিন স্তরবিশিষ্ট স্থানীয় সরকার প্রবর্তন করা হয়। যথা -

(১) ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদ

(ক) প্রত্যক্ষভোটে০১ জন চেয়ারম্যান এবং প্রতি ওয়ার্ডে ০৩ জন করে মোট ০৯ জন

নির্বাচিতসদস্য।০২ জন মনোনীত কৃষক এবং ০২ জন মহিলা প্রতিনিধি নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদগঠিত।

(খ) এর কার্যক্রম ০৫ বছর।

(গ) ইউনিয়ন পরিষদের কার্যাবলী, পৌর কার্যাবলী, রাজস্ব ও প্রশাসন সমন্বয় কার্যাবলী, নিরাপত্তা কার্যাবলী এবং উন্নয়নমূলক কার্যাবলী এই চারভাগে বিভক্ত।

 (২) থানা পর্যায়ে থানা পরিষদ 

(ক) থানা পরিষদ ও বেসরকারী সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত।

(খ) মহকুমা প্রশাসক ও সার্কেল অফিসার (উন্নয়ন) যথাক্রমে থানা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইসচেয়ারম্যান নিযুক্ত হন।

(গ) থানা পরিষদ থানা এলাকার সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড সমন্বয় করতো।

(৩) জেলা পর্যায়ে জেলা পরিষদ

(ক) জেলা পরিষদের দায়িত্ব ছিল পাঠাগার, হাসপাতাল ও ডিসপেনসারী, সরকারী সড়ক, কালভার্ট, পুল, সরকারী বাগান, খেলার মাঠ, রেস্ট হাউজ নির্মাণ ও সংরক্ষণ করা।

(খ) জেলা পরিষদ স্বেচ্ছায় সমাজ কল্যাণ, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, গণপূর্ত, অন্যান্য

সাধারণ কার্যাবলীও সম্পাদন করতে পারবে।

** স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ এবং উপজেলা পুনর্গঠন) আদেশ, ১৯৮২:

(১) থানা পরিষদকে উপজেলা পরিষদে রূপ দেয়া হয় এবং থানা প্রশাসন উপজেলা প্রশাসন নামে অভিহিত করা হয়।

(২) উপজেলা পরিষদে একজন নির্বাচিত চেয়ারম্যান, প্রতিনিধি সদস্য, ০৩ জন মহিলা সদস্য, উপজেলা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির সভাপতি, সরকারী সদস্য এবং একজন মনোনীত সদস্য নিয়ে গঠিত।

(৩) চেয়ারম্যান উপজেলার প্রাপ্ত বয়স্কদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবেন।

এই আইনেও উপজেলা পর্যায়ের কাজিগুলিকে Transfer Subject ও Retained Subject-এ ভাগ করা হয়।

 

 

বাংলাদেশের সংবিধানে স্থানীয় সরকার:

 

বাংলাদেশেরে সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে রাস্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে বলা হয়েছে:

 

অনুচ্ছেদ ৯: " রাস্ট্র সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিগণ সমন্বয়ে গঠিত স্থানীয় শাসন-সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানসমূহকে উৎসাহ দান করিবেন এবং এই সকল প্রতিষ্ঠানসমূহে কৃষক, শ্রমিক এবং মহিলাদিগকে যথাসম্ভব বিশেষ প্রতিনিধিত্ব দেওয়া হইবে।"

 

অনচ্ছেদ ৫৯ (১) "আইনানুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানসমূহের উপর প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক প্রশাসনিক একাংশের স্থানীয় শাসনের ভার প্রদান করা হইবে।"

(২) "এই সংবিধান ও অন্য কোন আইন-সাপেক্ষে সংসদ আইনের দ্বারা যেরুপ নির্দিষ্ট করিবেন। এই অনুচ্চেদের (১) দফায় উল্লিখিত অনুরুপ প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান যথোপযুক্ত প্রশাসনিক একাংশের মধ্যে সেইরুপ দায়িত্ব পালন করিবেন এবং অনুরুপ আইনে নিন্মলিখিত বিষয় সংক্রান্ত দায়িত্ব অন্তর্ভুক্ত হইতে পারিবে:

(ক) প্রশাসন ও সরকারী কর্মচারীদের কার্য:

(খ) জনশৃংখলা রক্ষা;

(গ) জনসাধারণের কার্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্পর্কিত পরিকল্পনা প্রনয়ন ও বাস্তবায়ন।"